ঢাকা ০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি এবং ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কিনা জেনে নিন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৬:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪ ৪ বার পড়া হয়েছে

ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমরা জীবিকার জন্য নানাভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকি। ঠিক তেমনি ভাবে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি। কিন্তু হঠাৎ করে যদি আপনি উপার্জনে অক্ষম হয়ে যান কিংবা মারা যান তাহলে আপনার পরিবারের কি হবে? ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ ঠিক এই বিষয়ের উপরেই ভিত্তি করে। তারা আপনার জানমালের উপর নির্দিষ্ট হারে বীমা গ্রহণ করবে এবং সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার অর্থ প্রদান করবে।

ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি

সাধারণভাবে বীমা পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য ছোট একটি উদাহরণ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।

ধরুন আপনার একটি মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকার রয়েছে। সাধারণত এই ধরনের যানবাহন গুলি আমরা বছরে পর বছর ব্যবহার করি। বিভিন্ন দুর্ঘটনা কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরিবর্তন করা হয় যন্ত্রাংশ। যেগুলোর খরচ বেশ ব্যয়বহুল। একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি আপনাকে অফার করল যে, তাদের প্রতিষ্ঠানে আপনি গাড়ির নামে একটি বীমা ক্রয় করবেন।

যেই ইনস্যুরেন্সর অধীনে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে আগামী ১০ বছর আপনি তাদেরকে প্রদান করবেন। যদি এই ১০ বছরের মধ্যে আপনার গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সম্পূর্ণ খরচ কোম্পানি বহন করবে। আর যদি এই সময়ের ভিতরে গাড়ি কোন দূর্ঘটনার মধ্যে না পড়ে তাহলে আপনি জমাকৃত তো অর্থ ফেরত পাবেন কিনা সেটি আপনার বিমার ধরন এবং কোম্পানির পলিসির উপর নির্ভর করে।

কারণ বীমার অনেক ধরনের প্রকারভেদ হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর যে অর্থ জমা হয় সেটা ফেরত প্রদান করা হয় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকে। তাই বিমান টাকা ফেরত পাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে সে পলিসি এবং বীমার ক্যাটাগরির উপর।

আশা করি ইনস্যুরেন্স কি ব্যাপারে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। এখন আসি জীবন বীমা বা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যাপারে।

ইনস্যুরেন্স কি এবং কিভাবে কাজ করে

এই ধরনের জীবন বীমা কিংবা ইনস্যুরেন্সের আবার বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য বীমা, শিক্ষা বীমা, সঞ্চয় বীমা, অবসর জীবনের পরিকল্পনা ইত্যাদি। সাধারণভাবে আমি জীবন বিমার কথাই আলোচনা করছি।

আপনি যদি কোন ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এই ব্যাপারে তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতিমাসে আপনাকে প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। এখানে প্রিমিয়াম বলতে কিস্তি বা ইনস্টলমেন্ট কে বোঝানো হয়েছে। কোন কারনে আপনার যদি দুর্ঘটনায় পড়েন বা মা-রা যান তাহলে চুক্তির নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনার নমিনী অথবা উত্তরাধিকার কে প্রদান করা হবে।

মানুষ এই ধরনের চুক্তিতে আগ্রহী হয় কারণ বেশ ভালো অর্থ প্রদান করা হয় বীমা কারী ব্যক্তি মা-রা গেলে। তাই অনেকেই নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে লাইফ ইনস্যুরেন্স করতে চুক্তিবদ্ধ হয়।

এছাড়াও শিক্ষা বীমা, অবসর বীমা ইত্যাদির মাধ্যমে সন্তানাদির লেখাপড়ার খরচ কিংবা শেষ বয়সের আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করাই ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইনস্যুরেন্স করা হালাল কিনা

বর্তমানে আমরা আশেপাশের বিভিন্ন খবরে দেখেছি এই ধরনের বীমা কোম্পানি বা প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন। যদিও সেটা বড় বড় এবং সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নয়। বরং কিছু কিছু ভূয়া প্রতিষ্ঠান এবং লোকজন মানুষকে নানা ধরনের অর্থে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে থাকে।

এমনকি ইসলামের নামেও এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতারণার ঘটনাও শোনা গিয়েছে।

সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে সারা বিশ্বেরই আলেমগণ ধর্মীয়, নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের বীমাকে সম্পূর্ণভাবে নাজায়েজ এবং হারাম বলে অবিহিত করেছেন।

কারণ এই ধরনের চুক্তিতে একজনের জানমালের বিনিময়ের শর্তে আরেকজন লাভ করে থাকে। আর ব্যবসায়িক চুক্তি ছাড়া আরেকজনের মাল বিনিময় ছাড়া গ্রহন করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে বর্তমান যুগের ফিফাহবিদগণ এবং স্কলারগণ একমত।

ইসলামে কোন ধরনের বীমা জায়েজ

যদি একদল ব্যক্তির এমন একটি ফান গঠন করে যেখানে ফান্ডের কোন সদস্য একই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফান্ড থেকে তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এধরনের প্রক্রিয়া ফিকাহবিদ এবং আলেমরা জায়েজ বলেছেন। তবে এর শর্ত হলো ফান্ডের সাথে সুদের কোন সম্পর্ক থাকা যাবে না। অথবা অবৈধ, হারাম কাজে টাকা বিনিয়োগ করা যাবে না।

যদি ফান্ড থেকে সুদের ভিত্তিতে কোন টাকা প্রদান কিংবা গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটি সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে।

তবে সরকার কর্তৃক কোনো জিনিসের উপর আবশ্যক বীমা থাকলে সেটি ওলামায়ে কেরামগণের মতে করা যেতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি এবং জীবন বীমা কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকে এটি করা একদমই হারাম।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কি জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি এবং ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল কিনা জেনে নিন

আপডেট সময় : ০৪:৪৬:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪

আমরা জীবিকার জন্য নানাভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকি। ঠিক তেমনি ভাবে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করি। কিন্তু হঠাৎ করে যদি আপনি উপার্জনে অক্ষম হয়ে যান কিংবা মারা যান তাহলে আপনার পরিবারের কি হবে? ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ ঠিক এই বিষয়ের উপরেই ভিত্তি করে। তারা আপনার জানমালের উপর নির্দিষ্ট হারে বীমা গ্রহণ করবে এবং সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার অর্থ প্রদান করবে।

ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি

সাধারণভাবে বীমা পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য ছোট একটি উদাহরণ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।

ধরুন আপনার একটি মোটরসাইকেল কিংবা প্রাইভেটকার রয়েছে। সাধারণত এই ধরনের যানবাহন গুলি আমরা বছরে পর বছর ব্যবহার করি। বিভিন্ন দুর্ঘটনা কিংবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পরিবর্তন করা হয় যন্ত্রাংশ। যেগুলোর খরচ বেশ ব্যয়বহুল। একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি আপনাকে অফার করল যে, তাদের প্রতিষ্ঠানে আপনি গাড়ির নামে একটি বীমা ক্রয় করবেন।

যেই ইনস্যুরেন্সর অধীনে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে আগামী ১০ বছর আপনি তাদেরকে প্রদান করবেন। যদি এই ১০ বছরের মধ্যে আপনার গাড়ি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সম্পূর্ণ খরচ কোম্পানি বহন করবে। আর যদি এই সময়ের ভিতরে গাড়ি কোন দূর্ঘটনার মধ্যে না পড়ে তাহলে আপনি জমাকৃত তো অর্থ ফেরত পাবেন কিনা সেটি আপনার বিমার ধরন এবং কোম্পানির পলিসির উপর নির্ভর করে।

কারণ বীমার অনেক ধরনের প্রকারভেদ হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মেয়াদের পর যে অর্থ জমা হয় সেটা ফেরত প্রদান করা হয় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটা সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকে। তাই বিমান টাকা ফেরত পাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে সে পলিসি এবং বীমার ক্যাটাগরির উপর।

আশা করি ইনস্যুরেন্স কি ব্যাপারে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। এখন আসি জীবন বীমা বা লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যাপারে।

ইনস্যুরেন্স কি এবং কিভাবে কাজ করে

এই ধরনের জীবন বীমা কিংবা ইনস্যুরেন্সের আবার বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য বীমা, শিক্ষা বীমা, সঞ্চয় বীমা, অবসর জীবনের পরিকল্পনা ইত্যাদি। সাধারণভাবে আমি জীবন বিমার কথাই আলোচনা করছি।

আপনি যদি কোন ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এই ব্যাপারে তাহলে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে প্রতিমাসে আপনাকে প্রিমিয়াম প্রদান করতে হবে। এখানে প্রিমিয়াম বলতে কিস্তি বা ইনস্টলমেন্ট কে বোঝানো হয়েছে। কোন কারনে আপনার যদি দুর্ঘটনায় পড়েন বা মা-রা যান তাহলে চুক্তির নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনার নমিনী অথবা উত্তরাধিকার কে প্রদান করা হবে।

মানুষ এই ধরনের চুক্তিতে আগ্রহী হয় কারণ বেশ ভালো অর্থ প্রদান করা হয় বীমা কারী ব্যক্তি মা-রা গেলে। তাই অনেকেই নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে লাইফ ইনস্যুরেন্স করতে চুক্তিবদ্ধ হয়।

এছাড়াও শিক্ষা বীমা, অবসর বীমা ইত্যাদির মাধ্যমে সন্তানাদির লেখাপড়ার খরচ কিংবা শেষ বয়সের আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করাই ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ।

ইসলামের দৃষ্টিতে ইনস্যুরেন্স করা হালাল কিনা

বর্তমানে আমরা আশেপাশের বিভিন্ন খবরে দেখেছি এই ধরনের বীমা কোম্পানি বা প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন। যদিও সেটা বড় বড় এবং সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নয়। বরং কিছু কিছু ভূয়া প্রতিষ্ঠান এবং লোকজন মানুষকে নানা ধরনের অর্থে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে থাকে।

এমনকি ইসলামের নামেও এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রতারণার ঘটনাও শোনা গিয়েছে।

সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে সারা বিশ্বেরই আলেমগণ ধর্মীয়, নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের বীমাকে সম্পূর্ণভাবে নাজায়েজ এবং হারাম বলে অবিহিত করেছেন।

কারণ এই ধরনের চুক্তিতে একজনের জানমালের বিনিময়ের শর্তে আরেকজন লাভ করে থাকে। আর ব্যবসায়িক চুক্তি ছাড়া আরেকজনের মাল বিনিময় ছাড়া গ্রহন করা সম্পূর্ণ হারাম। কেননা এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে বর্তমান যুগের ফিফাহবিদগণ এবং স্কলারগণ একমত।

ইসলামে কোন ধরনের বীমা জায়েজ

যদি একদল ব্যক্তির এমন একটি ফান গঠন করে যেখানে ফান্ডের কোন সদস্য একই দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফান্ড থেকে তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। এধরনের প্রক্রিয়া ফিকাহবিদ এবং আলেমরা জায়েজ বলেছেন। তবে এর শর্ত হলো ফান্ডের সাথে সুদের কোন সম্পর্ক থাকা যাবে না। অথবা অবৈধ, হারাম কাজে টাকা বিনিয়োগ করা যাবে না।

যদি ফান্ড থেকে সুদের ভিত্তিতে কোন টাকা প্রদান কিংবা গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটি সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যাবে।

তবে সরকার কর্তৃক কোনো জিনিসের উপর আবশ্যক বীমা থাকলে সেটি ওলামায়ে কেরামগণের মতে করা যেতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির কাজ কি এবং জীবন বীমা কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আপনাদের সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকে এটি করা একদমই হারাম।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কি জানতে এখানে প্রবেশ করুন।