কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি
- আপডেট সময় : ১০:৩৭:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৯ বার পড়া হয়েছে
আমাদের প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান নিয়ে পাথর তৈরি হয়ে থাকে। সেগুলো আবার আমরা নানা ধরনের কাজে ব্যবহারও করি। একইভাবে মানব দেহের বিভিন্ন উপাদান নিয়েও পাথর তৈরি হতে পারে শরীরের ভেতরে। আপনি মাঝে মাঝে শুনে থাকবেন পিত্তথলি, অগ্নাশয়, মূত্রথলী ও কিডনিতে পাথর হওয়ার ব্যাপারে।
কিডনির কাজ কি
যেকোনো ধরনের ইঞ্জিন কিংবা যন্ত্রাংশ চালনা করলে সেটিতে কিছু পরিমাণে ময়লা এবং দূষিত পদার্থ জমতে থাকে। ঠিক মানব দেহের অভ্যন্তরেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক কার্যকলাপ সংগঠিত হওয়ার কারণে দেহে কিছু পরিমাণে দূষিত পদার্থ উৎপন্ন হয়। আমাদের রক্ত থেকে এই সকল পদার্থ গুলি বের করে দেওয়াই হচ্ছে কিডনির প্রধান কাজ। পরবর্তীতে সেই পদার্গুলো মল মূত্রত্যাগের মাধ্যমে দেহতে বের হয়ে যায়। তাই এটা যদি কোন কারনে কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের রক্তে দূষিত পদার্থের মাত্রা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।
কিডনিতে পাথর কেন হয়
গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী আমাদের প্রস্রাব যদি অতিমাত্রায় ঘন হয় তাহলে ছোট ছোট পাথরের কণা তৈরি হয়। এবং সেগুলো আস্তে আস্তে জমে ভবিষ্যতে বড় আকারের পাথর তৈরি করতে পারে।
এটি তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ডিহাইড্রেশন। অর্থাৎ যারা অতিরিক্ত তাপমাত্রায় কিংবা গরম আবহাওয়ায়ে কাজ করে কিন্তু পরিমিত পরিমাণে পানি পান করেন না তাদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন বেশি হয়। কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণও এটি। মধ্যপ্রাচ্যের গরমের দেশ গুলোতে এই ধরনের রোগের সংখ্যা অনেক বেশি।
এছাড়াও প্রস্রাবের সংক্রমণের কারণেও পাথর হতে পারে। আবার আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন সাইট্রেট, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ইত্যাদি কিডনিতে পাথর তৈরিতে বাধা প্রদান করে। যদি কোন কারণে দেহে সেগুলো উপাদানের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আবার যদি প্রস্রাবে বিভিন্ন ধরনের ক্যালসিয়াম এবং ইউরিক এসিড অতিরিক্ত পরিমাণে নির্ভর করতে হয় তাহলেও পাথর তৈরি হতে পারে।
কিডনিতে কি কি ধরনের পাথর হয়ে থাকে
প্রায় রোগীদের ক্ষেত্রেই ক্যালসিয়াম অক্সালেট হয়ে থাকে। এটি মূলত এক্স-রে করলে ধরা পড়ে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম ফসফেটের মিশ্রণেও একটি পাথর হয়ে থাকে।
আবার যাদের গাউট কিংবা বাত জনিত রোগ আছে তাদের হতে পারে ইউরিক অ্যাসিড স্টোন।
কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ কি কি
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা বুঝতে পারেন না এই ভয়ানক রোগের কোন লক্ষণগুলো। তবে আপনার যদি মেরুদন্ডে নিয়মিত ব্যাখ্যা করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জরুরিভাবে টেস্ট করাতে পারেন। আবার কিডনিতে পাথর হলে পেটে অথবা পিঠের দুই পাশে হালকা হালকা ব্যথা অনুভব হতে পারে।
পুরুষ এবং নারী উভের ক্ষেত্রেই প্রস্রাবের সাথে হালকা রক্ত যাওয়া কিংবা লাল হয়ে যাওয়া অন্যতম একটি লক্ষণ। অনেক সময় জ্বর এবং বমি হতে পারে। যেহেতু এটি মূত্রনালীর একটি সংক্রমণের কারণে হয় তাই পাথর ইউরেটারে আটকে গেলে কিডনি চলে যেতে পারে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক একটি পরিস্থিতি। তাই কিডনি হওয়ার লক্ষণ গুলো দেখা দিলে কোনভাবেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে বিলম্ব করা উচিত নয়।
কিডনির পাথর দূর করার উপায়
এর চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে আকারের উপর। পাথরের সাইজ যদি ৪ মিলিটার কিংবা তার চাইতে ছোট হয়ে থাকে তাহলে এটি প্রস্রাবের সাথে একাই বের হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোগীদের বেশি বেশি পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমনকি ব্যথার ওষুধও প্রেস্ক্রিপশন লিখে থাকেন।
তারপর কিছুদিন পরপর এক্স-রে সিটি স্ক্যান করে দেখা হয় পাথরের অবস্থা। আবার পাথরের আকার যদি ৫ সেন্টিমিটার কিংবা তার চাইতে বড় হয় তাহলে শক ওয়েভ দিয়ে এটি ভিতর থেকে গুরু করে দেওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে এই গুড়ো গুলো প্রস্রাবের সাথে একাই বেরিয়ে আসে।
যেহেতু বর্তমানে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়েছে তাই কিডনিতে পাথর দূর করার সবচাইতে কার্যকর পদ্ধতি হলো পিসিএনএল। এর মাধ্যমে দেহের সুবিধাজনক দিক থেকে ছোট একটি ছিদ্র করে পাথ রগুলো ভেঙে ভেঙে বের করে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে চিকিৎসা পদ্ধতিটি ব্যবহার খুব ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করবেন কিভাবে
সুস্থভাবে জীবন যাপন করার জন্য আপনার প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। এমন কি কিডনি রোগ প্রতিরোধেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কিংবা যারা এ রোগ থেকে দূরে থাকতে চান তাদের জন্য নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
১। আপনার কাজের ধরন, অবস্থান, বয়সের উপর নির্ভর করে দৈনন্দিন ২ থেকে ৪ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে যারা সারাদিন কাজের সাথে যুক্ত থাকেন কিংবা গরমে বাস করেন। আবার যারা সারাদিন ঘরে বসে থাকেন কিংবা রৌদ্রে যাওয়া হয় না তাদের পানির চাহিদা তুলনামূলকভাবে একটু কম থাকে।
২। কখনো যদি মনে হয় প্রস্রাব করতে সমস্যা হচ্ছে কিংবা বাধা অনুভব হচ্ছে তো সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়।
৩। খাবারের সাথে যথাসম্ভব লবন কম খান।
৪। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার আমাদের দেহের ভিতরে অক্সালেটে পরিণত হয়। এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
উপসংহার
আমাদের ধারণা শুধুমাত্র ওষুধে কিডনিতে পাথর হওয়া দূর করা যাবে। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে এই রোগ প্রতিরোধের শতভাগ কার্যকর কোন ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি একা একাই বের হয়ে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন গ্রহণ ও অপারেশন করতে হতে পারে।
কিভবে নকল কসমেটিক্স চিনতে পারবেন? বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।