ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাকাশে নভোচারীরা কিভাবে চলাফেরা করেন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৮:২০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪ ২ বার পড়া হয়েছে

মহাকাশে নভোচারীরা কিভাবে চলাফেরা করেন

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মহাকাশ নিয়ে মানবজাতির কৌতুহলের শেষ নেই। বর্তমানে যদিও আধুনিক স্পেসশিপের মাধ্যমে মহাকাশে স্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক স্টেশন তবুও যেন স্বাদ মেটেনি মানুষের। সৌরজগতের অভ্যন্তরে এবং এর বাইরের মহাবিশ্বে কি কি রয়েছে তার খোঁজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। বিজ্ঞান প্রেমীদের সাধারণ একটি প্রশ্ন হচ্ছে মহাকাশে নভোচারীরা কিভাবে হাঁটেন কিংবা চলাফেরা করেন। কারণ সেখানে তো কোন বাতাস নেই।

মহাকাশ স্টেশনে বাইরের হাঁটা যতটাই কঠিন তার চাইতে অনেক বেশি বিপদজনক। সেখানে রয়েছে প্রচুর ঠান্ডা এবং এত বেশি চাপ যে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই যে কারও মারা যাওয়া কঠিন কিছু নয়। সেক্ষেত্রে নভোচারীরা বিশেষ ধরনের স্যুট পড়ে থাকেন। যেটিও অনেকটা মহাকাশযানের মতই। পিঠে বড় একটি ব্যাগ থাকে যেটি মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে বাতাস প্রদান করে। সেই সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়। বিশেষ ধরনের এই স্যুটের কয়েকটি স্তর রয়েছে যেগুলো কারণে বাইরে থেকে ভেতরে কিংবা ভেতর থেকে গ্যাস বাইরে বের হতে পারে না। স্পেশ পোশাকের বাইরের অংশ অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি যেটি অগ্নি প্রতিরোধী। সেই সাথে বিভিন্ন সৌরভ বিকিরণ থেকে নভোচারীকে রক্ষা করে।

মহাকাশের নভোচারীরা হাঁটেন কিভাবে

প্রতিটি নভোচারীর পোশাকে এক ধরনের টিউব লাগানো থাকে। সেই টিউব দিয়ে প্রবাহিত হয় ঠান্ডা পানি যাতে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। এজন্য অবশ্য প্রতিটি অ্যাস্ট্রোনট মহাকাশে যাওয়ার আগে সুইমিংপুলে বিশেষ ধরনের ট্রেনিং নেন। ট্রেনিংয়ের সময় তাদেরকে ডাইভারদের মতো ১০০ কেজি ওজনের ব্যাগ বহন করতে হয়। যেটি তাদেরকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের গতি অনেক বেশি থাকে। যেটির প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। অ্যাস্ট্রোনট স্টেশনের সাথে সাথে সমান গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু গতির আপেক্ষিকতার কারণে তারা সেটি অনুভব করতে পারেন না।

প্রতিটি স্টেশনের বাইরে তাদের নিজস্ব একটি অরবিট থাকে। সামান্য কোন ধাক্কা কিংবা নড়াচড়ার কারণেও অরবিট যে কোন সময় পরিবর্তিত হতে পারে। যদি কোন কারণে এমন ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের অনেক দূরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে তারা হারিয়ে যেতে পারে মহাশূন্যের অতল গহব্বরে। তাই নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি নভোচারী স্টেশনের সাথে বিশেষ ভাবে যুক্ত থাকেন। আর মহাকাশে হাঁটাচলার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

মহাকাশের চলাফেরার সুবিধার জন্য ১৯৮৪ সালে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাকপ্যাক আবিষ্কার করা হয়। যদি কোন কারনে একজন অ্যাস্ট্রোনট বিচ্ছন্ন হয়ে যায় তাহলে সেটির মাধ্যমে থ্রাষ্টার চালু করে নিজের চলার পথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনারা নিশ্চয়ই হলিউডের সিনেমায় নভোচারীদের চলাচলের এই ধরনের দৃশ্য দেখেছেন।

মহাকাশ ষ্টেশনে জীবনযাপন কেমন হয়

আমরা ছোটবেলায় কল্পকাহিনীতে পড়েছি দূরের মহাকাশে গিয়ে বিজ্ঞানীদের আটকে পড়ার বিভিন্ন ঘটনার সম্পর্কে। বাস্তবেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাসার দুই নভোচারী যাদের নাম হচ্ছে সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর আটকা পড়েছিলেন মহাকাশ ষ্টেশনে। তবে তারা ঠিক কবে নাগাদ পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানায়নি নাসা।

একটি স্পেশ স্টেশনে মধ্যেও ঘুমের জায়গার জন্য থাকে মোটামুটি একটি ছোটখাটো মোবাইল বুথের সমান। সেখানে রয়েছে জিরো গ্র্যাভিটি এবং এর কারণে সোজাভাবে শুয়ে থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার।

এছাড়া মহাকাশে চলাফেরার পাশাপাশি গোসল করা, খাওয়া ইত্যাদি বেশ কঠিন ব্যাপার-স্যাপার। কারণ এখানে পৃথিবীর মতো পানি উপর থেকে নিচে পড়ে না। যার কারণে আপনি চাইলেই মাথার উপরে পানি ঢেলে দিতে পারবেন না। যার কারণে অ্যাস্ট্রোনটরা একটি ভেজা কাপড়ের সাথে পানি মিশিয়ে সেটিদের শরীর এবং মুছে থাকেন। চুল পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করেন শ্যাম্পু যদিও সেটি আর পরবর্তীতে ধোয়ার প্রয়োজন হয় না।

আমাদের শেষ কথা

পৃথিবী বৈচিত্র্যময় এবং তার চাইতে অনেক বেশি রহস্যময় মহাবিশ্ব। এখন পর্যন্ত মানবজাতি সেই রহস্যময় মহাবিশ্বের বিন্দু পরিমাণও জানতে পারেনি। এমনটাই ধারণা তাদের। মহাকাশে নভোচারীদের চলাফেরা দেখে অনেকেরই আগ্রহ থাকে সেখানে যাওয়ার। কিন্তু বিশ্বাস করুন এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচুর মানসিক শক্তি।

আপনি কি জানেন মোবাইল ফোনকে বাংলায় কি বলে? বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

মহাকাশে নভোচারীরা কিভাবে চলাফেরা করেন

আপডেট সময় : ০৮:২০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

মহাকাশ নিয়ে মানবজাতির কৌতুহলের শেষ নেই। বর্তমানে যদিও আধুনিক স্পেসশিপের মাধ্যমে মহাকাশে স্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক স্টেশন তবুও যেন স্বাদ মেটেনি মানুষের। সৌরজগতের অভ্যন্তরে এবং এর বাইরের মহাবিশ্বে কি কি রয়েছে তার খোঁজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। বিজ্ঞান প্রেমীদের সাধারণ একটি প্রশ্ন হচ্ছে মহাকাশে নভোচারীরা কিভাবে হাঁটেন কিংবা চলাফেরা করেন। কারণ সেখানে তো কোন বাতাস নেই।

মহাকাশ স্টেশনে বাইরের হাঁটা যতটাই কঠিন তার চাইতে অনেক বেশি বিপদজনক। সেখানে রয়েছে প্রচুর ঠান্ডা এবং এত বেশি চাপ যে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই যে কারও মারা যাওয়া কঠিন কিছু নয়। সেক্ষেত্রে নভোচারীরা বিশেষ ধরনের স্যুট পড়ে থাকেন। যেটিও অনেকটা মহাকাশযানের মতই। পিঠে বড় একটি ব্যাগ থাকে যেটি মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে বাতাস প্রদান করে। সেই সাথে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়। বিশেষ ধরনের এই স্যুটের কয়েকটি স্তর রয়েছে যেগুলো কারণে বাইরে থেকে ভেতরে কিংবা ভেতর থেকে গ্যাস বাইরে বের হতে পারে না। স্পেশ পোশাকের বাইরের অংশ অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি যেটি অগ্নি প্রতিরোধী। সেই সাথে বিভিন্ন সৌরভ বিকিরণ থেকে নভোচারীকে রক্ষা করে।

মহাকাশের নভোচারীরা হাঁটেন কিভাবে

প্রতিটি নভোচারীর পোশাকে এক ধরনের টিউব লাগানো থাকে। সেই টিউব দিয়ে প্রবাহিত হয় ঠান্ডা পানি যাতে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। এজন্য অবশ্য প্রতিটি অ্যাস্ট্রোনট মহাকাশে যাওয়ার আগে সুইমিংপুলে বিশেষ ধরনের ট্রেনিং নেন। ট্রেনিংয়ের সময় তাদেরকে ডাইভারদের মতো ১০০ কেজি ওজনের ব্যাগ বহন করতে হয়। যেটি তাদেরকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের গতি অনেক বেশি থাকে। যেটির প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে। অ্যাস্ট্রোনট স্টেশনের সাথে সাথে সমান গতিতে চলতে থাকে। কিন্তু গতির আপেক্ষিকতার কারণে তারা সেটি অনুভব করতে পারেন না।

প্রতিটি স্টেশনের বাইরে তাদের নিজস্ব একটি অরবিট থাকে। সামান্য কোন ধাক্কা কিংবা নড়াচড়ার কারণেও অরবিট যে কোন সময় পরিবর্তিত হতে পারে। যদি কোন কারণে এমন ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের অনেক দূরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে তারা হারিয়ে যেতে পারে মহাশূন্যের অতল গহব্বরে। তাই নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি নভোচারী স্টেশনের সাথে বিশেষ ভাবে যুক্ত থাকেন। আর মহাকাশে হাঁটাচলার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন।

মহাকাশের চলাফেরার সুবিধার জন্য ১৯৮৪ সালে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাকপ্যাক আবিষ্কার করা হয়। যদি কোন কারনে একজন অ্যাস্ট্রোনট বিচ্ছন্ন হয়ে যায় তাহলে সেটির মাধ্যমে থ্রাষ্টার চালু করে নিজের চলার পথ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনারা নিশ্চয়ই হলিউডের সিনেমায় নভোচারীদের চলাচলের এই ধরনের দৃশ্য দেখেছেন।

মহাকাশ ষ্টেশনে জীবনযাপন কেমন হয়

আমরা ছোটবেলায় কল্পকাহিনীতে পড়েছি দূরের মহাকাশে গিয়ে বিজ্ঞানীদের আটকে পড়ার বিভিন্ন ঘটনার সম্পর্কে। বাস্তবেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাসার দুই নভোচারী যাদের নাম হচ্ছে সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর আটকা পড়েছিলেন মহাকাশ ষ্টেশনে। তবে তারা ঠিক কবে নাগাদ পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানায়নি নাসা।

একটি স্পেশ স্টেশনে মধ্যেও ঘুমের জায়গার জন্য থাকে মোটামুটি একটি ছোটখাটো মোবাইল বুথের সমান। সেখানে রয়েছে জিরো গ্র্যাভিটি এবং এর কারণে সোজাভাবে শুয়ে থাকা খুবই কঠিন ব্যাপার।

এছাড়া মহাকাশে চলাফেরার পাশাপাশি গোসল করা, খাওয়া ইত্যাদি বেশ কঠিন ব্যাপার-স্যাপার। কারণ এখানে পৃথিবীর মতো পানি উপর থেকে নিচে পড়ে না। যার কারণে আপনি চাইলেই মাথার উপরে পানি ঢেলে দিতে পারবেন না। যার কারণে অ্যাস্ট্রোনটরা একটি ভেজা কাপড়ের সাথে পানি মিশিয়ে সেটিদের শরীর এবং মুছে থাকেন। চুল পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করেন শ্যাম্পু যদিও সেটি আর পরবর্তীতে ধোয়ার প্রয়োজন হয় না।

আমাদের শেষ কথা

পৃথিবী বৈচিত্র্যময় এবং তার চাইতে অনেক বেশি রহস্যময় মহাবিশ্ব। এখন পর্যন্ত মানবজাতি সেই রহস্যময় মহাবিশ্বের বিন্দু পরিমাণও জানতে পারেনি। এমনটাই ধারণা তাদের। মহাকাশে নভোচারীদের চলাফেরা দেখে অনেকেরই আগ্রহ থাকে সেখানে যাওয়ার। কিন্তু বিশ্বাস করুন এর জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং প্রচুর মানসিক শক্তি।

আপনি কি জানেন মোবাইল ফোনকে বাংলায় কি বলে? বিস্তারিত জানতে এখানে প্রবেশ করুন।