ঢাকা ০৬:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আপনার বাসার জন্য কোন টিভি সবচাইতে ভালো হবে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ৪৪ বার পড়া হয়েছে

ভালো টিভি চেনার উপায়

আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বিজ্ঞান দিন দিন এগিয়ে চলছে। সেই সাথে আমরা পাচ্ছি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন ডিভাইস। আর যদি আপনার বর্তমান টেকনোলজি সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা না থাকে তাহলে ভালো টিভি চেনার অবশ্যই আলাদা ভাবে জানা প্রয়োজন। তা নাহলে এটি কেনা আপনার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ বাজারে নতুন নতুন সুবিধা এবং নানারকম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হরেক রকম টিভি পাওয়া যায়।

তাই ভালো টিভি চেনার উপায় গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ে এই ডিভাইসটিকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ পুরো লিখাটি জুড়ে আমি আলোচনা করব কিভাবে আপনি বাজারের সেরা একটি টিভি খুঁজে বের করতে পারেন।

একজন বিক্রেতা কিংবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সবসময় চাইবে আপনাকে গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করতে। কিন্তু আপনার আসলে চাহিদা কি সেটি আপনার নিজেরই নির্ধারণ করতে হবে। যেহেতু এই ধরনের একটি ডিভাইসের দাম অনেকটাই বেশি তাই কেনার আগে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে সকল খুঁটিনাটি বিষয় গুলো যাচাই করা প্রয়োজন যাতে করে আপনি দীর্ঘদিন ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারেন। চলুন এ সম্পর্কে বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ জেনে নেই।

প্রথমে আসি ব্র্যান্ডের দিকে

বাংলাদেশের বাজারে দেশী, বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি পাওয়া যায়। সকল কোম্পানি ভালো পণ্য অফার করে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু মডেলের আলাদা আলাদা সুবিধা এবং অসুবিধা থাকে। এ সম্পর্কে অবশ্য প্রতিষ্ঠান নিজেই ঘোষণা দিয়ে দেয়।

তবে Samsung, walton, singer, sony ইত্যাদি বর্তমান সময়ে বাজারের সেরা ব্র্যান্ড বলতে পারেন। তবে এই ব্র্যান্ড নির্বাচন করার আগে অবশ্যই বাজেটেও একটু মনোযোগ দিতে হবে। তুলনামূলকভাবে sony এবং samsung এর স্মার্ট টিভিগুলোর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।

যেকোনো নির্দিষ্ট ব্যান্ডের পণ্য ক্রয়ের জন্য অবশ্যই অথোরাইজ শোরুম থেকে কেনা উচিত। আপনি দোকান থেকে কিনলে অবশ্য কিছুটা কম দামে পাবেন তবুও সব সময় চেষ্টা করবেন অফিসিয়াল শোরুম থেকে পণ্য ক্রয় করার।

ভালো টিভি চেনার উপায় হচ্ছে ডিসপ্লে

একটি টেলিভিশনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোনটি? আপনি নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে আমি ডিসপ্লের কথা বলছি। এটির আবার বেশ কয়েকটি প্রকার রয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে থ্রিডি ডিসপ্লেরও টেলিভিশন পাওয়া যায় বাজারে।

একটি টেলিভিশনের ডিসপ্লের পিক্সেল কোয়ালিটি যত উন্নত হবে সেটিতে ভিডিও দেখতেও তত বেশি ভালো লাগবে। আপনার যদি বাজেট নিয়ে কোন সমস্যা না থাকে তাহলে অত্যাধুনিক টেকনোলজি QLED ডিসপ্লের টেলিভিশন কিনতে পারেন। এছাড় LED, OLD টেকনোলজির ডিসপ্লেও অনেক ভালো হয়ে থাকে।

তবে যখন আপনি এটি দোকান হতে কিনবেন তখন ব্রাইটনেস, কনফিগারেশন অনুযায়ী পিকচার কোয়ালিটি, বিভিন্ন কর্ণার হতে দেখতে ক্লিয়ার কিনা ইত্যাদি চেক করে নিবেন। আর বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে কথা বলে এর সম্পর্কে আরো খুঁটিনাটি জেনে নিন।

ডিসপ্লে কি আইপিএস নাকি নন আইপিএস

আইপিএস টেকনোলজির ডিসপ্লের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে এবং এগুলো ব্যবহার করা হয় স্মার্টফোন, ল্যাপটপ গুলোতে। আপনি পুরাতন মডেলের টিভি গুলোতে দেখবেন সরাসরি সামনে বসলে স্পষ্ট ছবি দেখা যায় কিন্তু একটু সাইডে বসলে স্ক্রিনের ছবি স্পষ্ট দেখা যায় না।

কিন্তু আইপিএস ডিসপ্লে গুলি যেকোনো পাশ থেকে সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। তাই এটার দামও বেশি। তবে নন আইপিএস ডিসপ্লে দেখতে ভালো কিন্তু এক পাশ থেকে দেখার জন্য বেশ অসুবিধা জনক। তাই ভালো টিভি চেনার উপায় হিসেবে জেনে নিন আপনার কাঙ্খিত টিভি ডিসপ্লে কোন ধরনের।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি নাকি স্মার্ট টিভি

যদিও বর্তমানের বেশিরভাগ টিভি অ্যান্ড্রয়েড তবুও স্মার্ট টিভিও অনেকেই কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আপনি নিশ্চয়ই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন চালিয়েছেন। সেই মোবাইল ফোনে যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড টিভিতেও ঠিক একই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।

অর্থাৎ দুইটি ডিভাইস ব্যবহার করার ফাংশন গুলো একই রকমের। কোন টিভি ভালো সেটি আসলে এই ফাংশনটি নির্ধারণ করে না। স্মার্ট টিভিরও আলাদা অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। যেটি অনেকটা অ্যান্ড্রয়েডের মতো করে কাজ করে থাকে। ইউটিউবে ভিডিও দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, গেম ইত্যাদিও ডাউনলোড করতে পারবেন এই ধরনের স্মার্ট অথবা অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে। তবে বর্তমানে Androi টিভির চাহিদা সবচাইতে বেশি।

কোন টিভি ভালো সেটি যাচাই করুন বিভিন্ন ফিচার দিয়ে

অত্যাধুনিক স্মার্ট টিভি গুলোতে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সুবিধা থাকে। যেমন ভয়েসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, স্মার্ট রিমোট, কম্পিউটারের সাথে কানেকশন, এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ সংযোগ করা ইত্যাদি। এমনকি ফাইল আদান প্রদানের জন্য ব্লুটিথ সুবিধাও প্রদান করা হয়ে থাকে।

যারা প্রচুর পরিমাণে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই সুবিধা গুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর ভালো টিভি চেনার উপায় হিসেবে যাচাই করে নিন সেটির সাথে ইনবিল্ট অ্যাপ হিসেবে নেটফ্লিক্স, প্রাইম ভিডিও, ইউটিউব ইত্যাদি রয়েছে কিনা। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ওটিটি প্লাটফর্মের সাবস্ক্রিপশন অফার করে।

শব্দের মান কেমন

ডিসপ্লের পর সব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সেটির সাউন্ড কোয়ালিটি। কারণ আপনি অনেক বড় এবং সুন্দর দেখে টিভি ক্রয় করলেন কিন্তু সেটি সাউন্ড কোয়ালিটি একদম ভালো নয় তাহলে আনন্দ যেনো অর্ধেক টাই কমে যায়। বেশিরভাগ ভালো টিভি ক্ষেত্রে ডলবি এটমোস সাউন্ড সিস্টেম থাকে। এর মানে হচ্ছে আলাদা আলাদা দুটি অথবা চারটি স্পিকার ব্যবহার করা হয়। যাতে করে দর্শক একদম জীবন্ত দৃশ্যের মতো সবকিছু উপভোগ করতে পারেন।

এ সময় আরেকটি ব্যাপার খেয়াল রাখবেন স্পিকার যদি টিভির পেছনের সাইডে থাকে তাহলে সেখান থেকে ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি নাও পাওয়া যেতে পারে। তাইতো বেশিরভাগ স্মার্ট টিভির ক্ষেত্রে সামনে অথবা সাইডে স্পিকার বসানো হয়। সেই সাথে খেয়াল রাখবেন স্পিকার যেন কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ ওয়াটের হয়। বড় টিভির ক্ষেত্রে সাধারণত সিঙ্গেল স্পিকার অফার করা হয় না আর হলেও সেটিতে ভালো কোয়ালিটি হয় না।

ফোর কে (4k) ডিসপ্লে কিনা

আমি মনে করি বর্তমান যুগের স্মার্ট টিভির এটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাধারণ মানের এইচডি কিংবা ফুল এইচডি ডিসপ্লের চাইতে 4K ডিসপ্লে তে অনেক উন্নতমানের পিকচার কোয়ালিটি পাওয়া যায়। বলতে পারেন দৃশ্যগুলো একদম জীবন্ত মনে হয়। তাই সামান্য কিছু বাজেট বাড়িয়ে হলেও চেষ্টা করবেন ডিসপ্লে যেন অবশ্যই 4 হয়।

ভালো টিভি চেনার উপায় হিসেবে অনলাইনে রিভিউ গুলো দেখে নিন

আপনি যখন ব্র্যান্ড এবং মডেল নির্ধারণ করবেন তখন সেটি সার্চ দিয়ে ইন্টারনেটে রিভিউ গুলো দেখে নিন। ইতিমধ্য যারা এই মডেলটি কিনে ব্যবহার করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা কেমন সেটি জানলে আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সহজ হবে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপ গুলোতে পোস্ট করতে পারেন। কোন টিভি ভালো সেটি চেনার জন্য গ্রাহকদের সরাসরি মতামতই অধিক কার্যকরী। যদি রিভিউ গুলো ভালো না হয় তাহলে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলুন। আর বাজারে যেহেতু প্রতিনিয়তই দাম উঠানামা করে তাই বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট গুলোতে সার্চ দিয়ে দাম সম্পর্কে আপডেট থাকতে পারেন।

বিক্রয় পরবর্তী সেবাগ গুলি কি কি

বর্তমান যুগে ৪৩ ইঞ্চির একটি স্মার্ট কিংবা অ্যান্ড্রয়েড টিভি কেনার জন্য কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এত দামি একটি বস্তুর সাথে কি কি ওয়ারেন্ট, গ্যারান্টি এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবা প্রদান করবে সেগুলো বেশি সবচাইতে বেশি গুরুত্ব বহন করে।

তাই কোন ব্র্যান্ডের ওয়ারেন্টি কতদিনের সেগুলো জেনে নিন। এমনকি ভবিষ্যতে যদি কোন যন্ত্রাংশের খারাপ হয়ে যায় সেটার সার্ভিসিং খরচ কেমন তাও জানা জরুরী।

রিফ্রেশ রেট কত

আমরা যখন কোন ভিডিও দেখি তখন অসংখ্য স্টিল ইমেজ দ্রুতগতিতে পর্দার একপাশ থেকে আরেক পাশে চলতে থাকে। যেটির মাধ্যমে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও দেখতে পাই। অর্থাৎ আপনি যখন এক সেকেন্ডের ভিডিও দেখেন তখন সেটিতে ৬০টি ফ্রেম থাকে। মূলত এটি দ্রুতগতিতে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে চলতে থাকে বলে ভিডিও আকারে অনুভব করতে পারি। যেই টিভির রিফ্রেশ রেট যত বেশি তার ভিডিও কোয়ালিটি অনেক বেশি হবে। তাই কমপক্ষে ৬০ অথবা ১২০ রিফ্রেশ রেটের টিভি কেনার চেষ্টা করুন।

কোন টিভি ভালো সেটি জানার আগে বাজেট নির্ধারণ করুন

আপনার বাজেট যদি মোটামুটি ৫০ হাজার বা তার আশেপাশে থাকে তাহলে ৪৩ ইঞ্চির ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি পেয়ে যাবেন। আর যদি বাজেট ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে হয় তাহলে ব্র্যান্ডের মধ্যে নিলে ৩২ ইঞ্চি অথবা এর থেকে ছোট নিতে হবে। আর যদি চায়না কোম্পানি নিতে কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে এই বাজেটের মধ্যেই বড় টিভি পেয়ে যাবেন।

টিভির সাইজ কেমন হবে

ভালো টিভি চেনার উপায় গুলি জানার পাশাপাশি আপনাকে এটিও জানতে হবে কত সাইজের টিভি কিনবেন। এক্ষেত্রে যেটি বিবেচনায় আনতে হবে সেটি হচ্ছে আপনার রুমের সাইজ কত। কারণ বড় পর্দার টিভি যদি আপনি কাছে থেকে বসে দেখেন তাহলে কখনোই উপভোগ্য হবে না এবং চোখের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে টিভির পর্দার সাইজকে ১০ দিয়ে ভাগ করলে যে নাম্বারটি পাওয়া যাবে তত ফুট দূরে বসে সেটি দেখা উচিত।

অর্থাৎ টিভির পর্দা যদি ১০০ ইঞ্চি হয় তাহলে ১০০ কে ১০ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ১০ ফুট। অর্থাৎ ১০০ ইঞ্চি ডিসপ্লে বিশিষ্ট একটি টিভি আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে ১০ ফুট দূরে বসে থাকতে হবে। তাই আপনি টেলিভিশন টি কোন রুমে সেট করবেন সেটির দুরুত্ব মেপে নির্বাচন করুন টিভির সাইজ।

টেলিভিশনের রিমোট

এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র। কারণ এটি তারা পুরো স্মার্ট টিভিটি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্মার্ট টিভির সাথে যে রিমোট গুলো প্রোভাইড করা হয় সেগুলো বেশ দামী। আর সেই সাথে সকল সুবিধা আছে কিনা সেটি যাচাই করে নিন।

আমাদের শেষ কথা

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এই টিভি। যেহেতু বাজারের নানা ধরনের এবং নানা সুবিধা সম্পূর্ণ, ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির এই যন্ত্রটি পাওয়া যায় তাই ভালো টিভি চেনার উপায় গুলি অবশ্যই আগে থেকেই জানা প্রয়োজন। এতে করে প্রতারিত হবেন না এবং সঠিক ডিভাইসটি নির্বাচন করতে পারবেন।

কম খরচে ঘরোয়া উপায়ে ওজন কমানোর পদ্ধতি গুলো জানতে এখানে প্রবেশ করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

আপনার বাসার জন্য কোন টিভি সবচাইতে ভালো হবে

আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

বিজ্ঞান দিন দিন এগিয়ে চলছে। সেই সাথে আমরা পাচ্ছি দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য নতুন নতুন ডিভাইস। আর যদি আপনার বর্তমান টেকনোলজি সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা না থাকে তাহলে ভালো টিভি চেনার অবশ্যই আলাদা ভাবে জানা প্রয়োজন। তা নাহলে এটি কেনা আপনার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ বাজারে নতুন নতুন সুবিধা এবং নানারকম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হরেক রকম টিভি পাওয়া যায়।

তাই ভালো টিভি চেনার উপায় গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ে এই ডিভাইসটিকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ পুরো লিখাটি জুড়ে আমি আলোচনা করব কিভাবে আপনি বাজারের সেরা একটি টিভি খুঁজে বের করতে পারেন।

একজন বিক্রেতা কিংবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান সবসময় চাইবে আপনাকে গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করতে। কিন্তু আপনার আসলে চাহিদা কি সেটি আপনার নিজেরই নির্ধারণ করতে হবে। যেহেতু এই ধরনের একটি ডিভাইসের দাম অনেকটাই বেশি তাই কেনার আগে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে সকল খুঁটিনাটি বিষয় গুলো যাচাই করা প্রয়োজন যাতে করে আপনি দীর্ঘদিন ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারেন। চলুন এ সম্পর্কে বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ জেনে নেই।

প্রথমে আসি ব্র্যান্ডের দিকে

বাংলাদেশের বাজারে দেশী, বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টিভি পাওয়া যায়। সকল কোম্পানি ভালো পণ্য অফার করে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানির নির্দিষ্ট কিছু মডেলের আলাদা আলাদা সুবিধা এবং অসুবিধা থাকে। এ সম্পর্কে অবশ্য প্রতিষ্ঠান নিজেই ঘোষণা দিয়ে দেয়।

তবে Samsung, walton, singer, sony ইত্যাদি বর্তমান সময়ে বাজারের সেরা ব্র্যান্ড বলতে পারেন। তবে এই ব্র্যান্ড নির্বাচন করার আগে অবশ্যই বাজেটেও একটু মনোযোগ দিতে হবে। তুলনামূলকভাবে sony এবং samsung এর স্মার্ট টিভিগুলোর দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।

যেকোনো নির্দিষ্ট ব্যান্ডের পণ্য ক্রয়ের জন্য অবশ্যই অথোরাইজ শোরুম থেকে কেনা উচিত। আপনি দোকান থেকে কিনলে অবশ্য কিছুটা কম দামে পাবেন তবুও সব সময় চেষ্টা করবেন অফিসিয়াল শোরুম থেকে পণ্য ক্রয় করার।

ভালো টিভি চেনার উপায় হচ্ছে ডিসপ্লে

একটি টেলিভিশনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ কোনটি? আপনি নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে আমি ডিসপ্লের কথা বলছি। এটির আবার বেশ কয়েকটি প্রকার রয়েছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে থ্রিডি ডিসপ্লেরও টেলিভিশন পাওয়া যায় বাজারে।

একটি টেলিভিশনের ডিসপ্লের পিক্সেল কোয়ালিটি যত উন্নত হবে সেটিতে ভিডিও দেখতেও তত বেশি ভালো লাগবে। আপনার যদি বাজেট নিয়ে কোন সমস্যা না থাকে তাহলে অত্যাধুনিক টেকনোলজি QLED ডিসপ্লের টেলিভিশন কিনতে পারেন। এছাড় LED, OLD টেকনোলজির ডিসপ্লেও অনেক ভালো হয়ে থাকে।

তবে যখন আপনি এটি দোকান হতে কিনবেন তখন ব্রাইটনেস, কনফিগারেশন অনুযায়ী পিকচার কোয়ালিটি, বিভিন্ন কর্ণার হতে দেখতে ক্লিয়ার কিনা ইত্যাদি চেক করে নিবেন। আর বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে কথা বলে এর সম্পর্কে আরো খুঁটিনাটি জেনে নিন।

ডিসপ্লে কি আইপিএস নাকি নন আইপিএস

আইপিএস টেকনোলজির ডিসপ্লের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে এবং এগুলো ব্যবহার করা হয় স্মার্টফোন, ল্যাপটপ গুলোতে। আপনি পুরাতন মডেলের টিভি গুলোতে দেখবেন সরাসরি সামনে বসলে স্পষ্ট ছবি দেখা যায় কিন্তু একটু সাইডে বসলে স্ক্রিনের ছবি স্পষ্ট দেখা যায় না।

কিন্তু আইপিএস ডিসপ্লে গুলি যেকোনো পাশ থেকে সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়। তাই এটার দামও বেশি। তবে নন আইপিএস ডিসপ্লে দেখতে ভালো কিন্তু এক পাশ থেকে দেখার জন্য বেশ অসুবিধা জনক। তাই ভালো টিভি চেনার উপায় হিসেবে জেনে নিন আপনার কাঙ্খিত টিভি ডিসপ্লে কোন ধরনের।

অ্যান্ড্রয়েড টিভি নাকি স্মার্ট টিভি

যদিও বর্তমানের বেশিরভাগ টিভি অ্যান্ড্রয়েড তবুও স্মার্ট টিভিও অনেকেই কিনতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আপনি নিশ্চয়ই অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন চালিয়েছেন। সেই মোবাইল ফোনে যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড টিভিতেও ঠিক একই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।

অর্থাৎ দুইটি ডিভাইস ব্যবহার করার ফাংশন গুলো একই রকমের। কোন টিভি ভালো সেটি আসলে এই ফাংশনটি নির্ধারণ করে না। স্মার্ট টিভিরও আলাদা অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। যেটি অনেকটা অ্যান্ড্রয়েডের মতো করে কাজ করে থাকে। ইউটিউবে ভিডিও দেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, গেম ইত্যাদিও ডাউনলোড করতে পারবেন এই ধরনের স্মার্ট অথবা অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে। তবে বর্তমানে Androi টিভির চাহিদা সবচাইতে বেশি।

কোন টিভি ভালো সেটি যাচাই করুন বিভিন্ন ফিচার দিয়ে

অত্যাধুনিক স্মার্ট টিভি গুলোতে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সুবিধা থাকে। যেমন ভয়েসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ, স্মার্ট রিমোট, কম্পিউটারের সাথে কানেকশন, এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ সংযোগ করা ইত্যাদি। এমনকি ফাইল আদান প্রদানের জন্য ব্লুটিথ সুবিধাও প্রদান করা হয়ে থাকে।

যারা প্রচুর পরিমাণে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই সুবিধা গুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর ভালো টিভি চেনার উপায় হিসেবে যাচাই করে নিন সেটির সাথে ইনবিল্ট অ্যাপ হিসেবে নেটফ্লিক্স, প্রাইম ভিডিও, ইউটিউব ইত্যাদি রয়েছে কিনা। অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ওটিটি প্লাটফর্মের সাবস্ক্রিপশন অফার করে।

শব্দের মান কেমন

ডিসপ্লের পর সব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে সেটির সাউন্ড কোয়ালিটি। কারণ আপনি অনেক বড় এবং সুন্দর দেখে টিভি ক্রয় করলেন কিন্তু সেটি সাউন্ড কোয়ালিটি একদম ভালো নয় তাহলে আনন্দ যেনো অর্ধেক টাই কমে যায়। বেশিরভাগ ভালো টিভি ক্ষেত্রে ডলবি এটমোস সাউন্ড সিস্টেম থাকে। এর মানে হচ্ছে আলাদা আলাদা দুটি অথবা চারটি স্পিকার ব্যবহার করা হয়। যাতে করে দর্শক একদম জীবন্ত দৃশ্যের মতো সবকিছু উপভোগ করতে পারেন।

এ সময় আরেকটি ব্যাপার খেয়াল রাখবেন স্পিকার যদি টিভির পেছনের সাইডে থাকে তাহলে সেখান থেকে ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি নাও পাওয়া যেতে পারে। তাইতো বেশিরভাগ স্মার্ট টিভির ক্ষেত্রে সামনে অথবা সাইডে স্পিকার বসানো হয়। সেই সাথে খেয়াল রাখবেন স্পিকার যেন কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ ওয়াটের হয়। বড় টিভির ক্ষেত্রে সাধারণত সিঙ্গেল স্পিকার অফার করা হয় না আর হলেও সেটিতে ভালো কোয়ালিটি হয় না।

ফোর কে (4k) ডিসপ্লে কিনা

আমি মনে করি বর্তমান যুগের স্মার্ট টিভির এটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাধারণ মানের এইচডি কিংবা ফুল এইচডি ডিসপ্লের চাইতে 4K ডিসপ্লে তে অনেক উন্নতমানের পিকচার কোয়ালিটি পাওয়া যায়। বলতে পারেন দৃশ্যগুলো একদম জীবন্ত মনে হয়। তাই সামান্য কিছু বাজেট বাড়িয়ে হলেও চেষ্টা করবেন ডিসপ্লে যেন অবশ্যই 4 হয়।

ভালো টিভি চেনার উপায় হিসেবে অনলাইনে রিভিউ গুলো দেখে নিন

আপনি যখন ব্র্যান্ড এবং মডেল নির্ধারণ করবেন তখন সেটি সার্চ দিয়ে ইন্টারনেটে রিভিউ গুলো দেখে নিন। ইতিমধ্য যারা এই মডেলটি কিনে ব্যবহার করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা কেমন সেটি জানলে আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সহজ হবে।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন ফোরাম রয়েছে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপ গুলোতে পোস্ট করতে পারেন। কোন টিভি ভালো সেটি চেনার জন্য গ্রাহকদের সরাসরি মতামতই অধিক কার্যকরী। যদি রিভিউ গুলো ভালো না হয় তাহলে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলুন। আর বাজারে যেহেতু প্রতিনিয়তই দাম উঠানামা করে তাই বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট গুলোতে সার্চ দিয়ে দাম সম্পর্কে আপডেট থাকতে পারেন।

বিক্রয় পরবর্তী সেবাগ গুলি কি কি

বর্তমান যুগে ৪৩ ইঞ্চির একটি স্মার্ট কিংবা অ্যান্ড্রয়েড টিভি কেনার জন্য কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা প্রয়োজন। এত দামি একটি বস্তুর সাথে কি কি ওয়ারেন্ট, গ্যারান্টি এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবা প্রদান করবে সেগুলো বেশি সবচাইতে বেশি গুরুত্ব বহন করে।

তাই কোন ব্র্যান্ডের ওয়ারেন্টি কতদিনের সেগুলো জেনে নিন। এমনকি ভবিষ্যতে যদি কোন যন্ত্রাংশের খারাপ হয়ে যায় সেটার সার্ভিসিং খরচ কেমন তাও জানা জরুরী।

রিফ্রেশ রেট কত

আমরা যখন কোন ভিডিও দেখি তখন অসংখ্য স্টিল ইমেজ দ্রুতগতিতে পর্দার একপাশ থেকে আরেক পাশে চলতে থাকে। যেটির মাধ্যমে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও দেখতে পাই। অর্থাৎ আপনি যখন এক সেকেন্ডের ভিডিও দেখেন তখন সেটিতে ৬০টি ফ্রেম থাকে। মূলত এটি দ্রুতগতিতে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে চলতে থাকে বলে ভিডিও আকারে অনুভব করতে পারি। যেই টিভির রিফ্রেশ রেট যত বেশি তার ভিডিও কোয়ালিটি অনেক বেশি হবে। তাই কমপক্ষে ৬০ অথবা ১২০ রিফ্রেশ রেটের টিভি কেনার চেষ্টা করুন।

কোন টিভি ভালো সেটি জানার আগে বাজেট নির্ধারণ করুন

আপনার বাজেট যদি মোটামুটি ৫০ হাজার বা তার আশেপাশে থাকে তাহলে ৪৩ ইঞ্চির ভালো ব্র্যান্ডের স্মার্ট টিভি পেয়ে যাবেন। আর যদি বাজেট ২০ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে হয় তাহলে ব্র্যান্ডের মধ্যে নিলে ৩২ ইঞ্চি অথবা এর থেকে ছোট নিতে হবে। আর যদি চায়না কোম্পানি নিতে কোন অসুবিধা না থাকে তাহলে এই বাজেটের মধ্যেই বড় টিভি পেয়ে যাবেন।

টিভির সাইজ কেমন হবে

ভালো টিভি চেনার উপায় গুলি জানার পাশাপাশি আপনাকে এটিও জানতে হবে কত সাইজের টিভি কিনবেন। এক্ষেত্রে যেটি বিবেচনায় আনতে হবে সেটি হচ্ছে আপনার রুমের সাইজ কত। কারণ বড় পর্দার টিভি যদি আপনি কাছে থেকে বসে দেখেন তাহলে কখনোই উপভোগ্য হবে না এবং চোখের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে টিভির পর্দার সাইজকে ১০ দিয়ে ভাগ করলে যে নাম্বারটি পাওয়া যাবে তত ফুট দূরে বসে সেটি দেখা উচিত।

অর্থাৎ টিভির পর্দা যদি ১০০ ইঞ্চি হয় তাহলে ১০০ কে ১০ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ১০ ফুট। অর্থাৎ ১০০ ইঞ্চি ডিসপ্লে বিশিষ্ট একটি টিভি আপনাকে অবশ্যই কমপক্ষে ১০ ফুট দূরে বসে থাকতে হবে। তাই আপনি টেলিভিশন টি কোন রুমে সেট করবেন সেটির দুরুত্ব মেপে নির্বাচন করুন টিভির সাইজ।

টেলিভিশনের রিমোট

এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্র। কারণ এটি তারা পুরো স্মার্ট টিভিটি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্মার্ট টিভির সাথে যে রিমোট গুলো প্রোভাইড করা হয় সেগুলো বেশ দামী। আর সেই সাথে সকল সুবিধা আছে কিনা সেটি যাচাই করে নিন।

আমাদের শেষ কথা

বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা শুরু থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে এই টিভি। যেহেতু বাজারের নানা ধরনের এবং নানা সুবিধা সম্পূর্ণ, ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির এই যন্ত্রটি পাওয়া যায় তাই ভালো টিভি চেনার উপায় গুলি অবশ্যই আগে থেকেই জানা প্রয়োজন। এতে করে প্রতারিত হবেন না এবং সঠিক ডিভাইসটি নির্বাচন করতে পারবেন।

কম খরচে ঘরোয়া উপায়ে ওজন কমানোর পদ্ধতি গুলো জানতে এখানে প্রবেশ করুন।